ক্রিকেট ইতিহাসে এমন কিছু ক্রিকেটার আছেন যাদের যুগে যুগে জন্ম হয় না। এমন লিজেন্ডদের পেতে হলে ক্রিকেটকে অপেক্ষা করতে হয় অনেক বছর। কিন্তু এমন কিছু লিজেন্ড আছেন যারা ক্রিকেট ইতিহাসে শুধুমাত্র এক পিস। ক্রিকেট আর কখনো এমন লিজেন্ড পাবে কিনা সন্দেহ। শহীদ খান আফ্রিদী এমনই একজন। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার জন্যই তিনি ব্যাটিং-এ নামেন। তিনি এমন কিছু রেকর্ডের অধিকারী যা আর কোন ক্রিকেটারের নাই। তাঁর ফ্যানরা তাকে আদর করে ডাকবাবা বলে ডাকে। অনেকেই আবার ডাকরিদী বলে ডাকে। কিন্তু আমি তাকে ডাকবাবা বলেই ডাকি। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি এতো এতো ডাক মেরেছেন যে আফ্রিদী নিজেই সবাইকে বাধ্য করেছে তাকে ডাকবাবা বলে ডাকতে। গর্ব করার মত আফ্রিদীর কিছু রেকর্ড নিচে পর্যালোচনা করলাম।
প্রাচীন মিশরিয়দের চিত্রলিপিতে একটি প্রতীক ছিল যাকে "নেফর" বলা হতো, যার অর্থ হল "সুন্দর"। এই প্রতীকটি তাঁরা শূণ্য ব্যবহার করত। শূণ্য মানে যে সুন্দর এটা সবাই ভুলে গেলেও আফ্রিদী ভুলে যায় নি। তাই তো ডাকবাবা আফ্রিদী প্রতিনিয়ত সুন্দর সুন্দর শূণ্য মেরে যাচ্ছেন।
প্রাচীন মিশরিয়দের চিত্রলিপিতে একটি প্রতীক ছিল যাকে "নেফর" বলা হতো, যার অর্থ হল "সুন্দর"। এই প্রতীকটি তাঁরা শূণ্য ব্যবহার করত। শূণ্য মানে যে সুন্দর এটা সবাই ভুলে গেলেও আফ্রিদী ভুলে যায় নি। তাই তো ডাকবাবা আফ্রিদী প্রতিনিয়ত সুন্দর সুন্দর শূণ্য মেরে যাচ্ছেন।
- আফ্রিদী ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার যে সীমিত ওভারের ক্রিকেট মানে ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই ডাক মারার দিক দিয়ে টপ টেনে আছেন।
- আফ্রিদী আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৪১ টি ডাক মেরেছেন।
- ওয়ানডে ক্রিকেটে ২য় সর্বোচ্চ ২৯ বার তিনি ডাক মেরেছেন। ডাক মারা মানে শূণ্য রানে আউট হয়ে যাওয়া। কিন্তু যখন ব্যাটসম্যান ক্রিজে এসে প্রথম বলেই আউট হয়ে যায় তখন তাকে বলে গোল্ডেন ডাক।
- আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ২৩ বার গোল্ডেন ডাক মারেন আফ্রিদী। এছাড়াও ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ১২ বার গোল্ডেন ডাক মেরেছেন তিনি। অর্থাৎ ৪১ বার শূণ্য রানে আউট হওয়ার মধ্যে ২৩ বারই প্রথম বলে আউট হয়ে গেছেন।
- কিছুদিন ধরে আফ্রিদীর আরেকটা ধারাবাহিক নতুন সংস্করণ আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেটা হল সিঙ্গেল ডিজিট লিজেন্ড হয়ে উঠা। লাস্ট ৫ টা ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচে আফ্রিদী দুই অংকের ঘরেই পৌছাতে পারে নি। স্কোর গুলো ৬,২,৫,২,২।
- আফ্রিদী ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আউট হয়েছেন ৩৩০ বার। এর মধ্যে শুধুমাত্র সিঙ্গেল ডিজিটেই আউট হয়েছেন ১৪০ বার। একটা ব্যাটসম্যান ১৪০ টা ম্যাচে ১০ রান করার আগেই আউট হয়ে গিয়েছে। ভাবা যায় ????? উনি লিজেন্ড হবেন না তো কি আপনি লিজেন্ড হবেন?
১৪০ বার সিঙ্গেল ডিজিটে আউট হলেও ১০-১৯ এর মধ্যে আউট হয়েছেন আরও ৬৬ বার। অর্থাৎ আফ্রিদী ০ থেকে ১৯ রানের মধ্যে আউট হয়েছেন ২০৬ বার। আর কোন ক্রিকেটার কি এটা পেরেছেন? পারেন নি।
আফ্রিদীর সিঙ্গেল ডিজিট স্কোর গুলোঃ
- ০ রানঃ ২৯ বার।
- ১ রানঃ ১২ বার।
- ২ রানঃ ১৫ বার।
- ৩ রানঃ ৯ বার।
- ৪ রানঃ ১৭ বার।
- ৫ রানঃ ১২ বার।
- ৬ রানঃ ১৫ বার।
- ৭ রানঃ ১১ বার।
- ৮ রানঃ ৬ বার।
- ৯ রানঃ ১৪ বার।
আফ্রিদী ওই ১ রান ও ২ রানের ইনিংস গুলোও যদি ডাক হতো, তাহলে অবস্থাটা কি হতো!!! বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে এসে আফ্রিদী সবচেয়ে বেশি ৩ বার আউট হয়েছে সাকিব আল হাসানের কাছে। এমনকি খালেদ মাহমুদ সুজনও তাকে ২ বার আউট করেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র ডাক মারেন ২০১২ এশিয়া কাপে সাকিব আল হাসানের বলে। তাও সেটা ছিল গোল্ডেন ডাক। আফ্রিদী ৩৮৪ ম্যাচ খেলে শত রানের পার্টনারশিপ করতে পেরেছে মাত্র ১৪ বার। যেখানে সাকিব ১৩৬ ম্যাচ খেলেই শত রানের পার্টনারশিপ করেছে ১৩ বার।
এখন ডাকবাবা আফ্রিদীর ডাক মারা শুরু হলো কবে থেকে এর ইতিহাসটাও জানা প্রয়োজন। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের আগে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে আফ্রিদী খেলেছিল ৫ টি টেস্ট ম্যাচ। এই ৫ ম্যাচের মধ্যেও ১৯৯৫ সালে আফ্রিদী একটি ডাক মেরে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন এবং নিজের আগমন বার্তা জানিয়ে দেন। এরপরই আফ্রিদীর অভিষেক হয় ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৬ সালে অভিষেক বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে ওই বছরেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ডাক মারেন আফ্রিদী। তাও সেটা যেই সেই ডাক না, একেবারে গোল্ডেন ডাক। ক্যারিয়ারের বাকি ৪০ ডাক মারতে আফ্রিদী ১ মিনিট সময় নিলেও প্রথম ডাকটি মারতে এক মিনিটও সময় নেন নি, নিয়েছেন মাত্র কয়েক সেকেন্ড। এখানে কিন্তু আফ্রিদী এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করে ফেলসে। প্রথম ডাকই গোল্ডেন ডাক মেরে বুঝিয়েছেন তিনি শুধু ডাক সম্রাটই হবেন না, গোল্ডেন ডাক সম্রাটও হবেন।
প্রতি বছরে বছরে আফ্রিদীর ডাক-ধারাবাহিকতাঃ
- ১৯৯৬ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাক মারেন।
- ১৯৯৭ সালে ৩ টি ডাক মারেন।
- ১৯৯৮ সালে ১ টি ডাক মারেন।
- ১৯৯৯ সালে ৩ টি ডাক মারেন। যার মধ্যে ২ টি'ই ছিল গোল্ডেন ডাক।
- ২০০০ সালে ৩ টি ডাক মারেন। যার মধ্যে ৩ টি'ই মানে সবগুলোই ছিল গোল্ডেন ডাক। গত শতাব্দীর শেষ বছরকে স্মরণীয় করে রাখতেই হয়তো সবগুলো গোল্ডেন ডাক মেরেছিলেন।
- ২০০১ সালে আফ্রিদী কোন ডাক মারেন নি। ভাবা যায়?? হয়তো ডাক গুলো ভিতরে জমিয়ে রেখেছিলেন।
- ২০০২ সালে তাই আফ্রিদী ৭ টি ডাক মারেন। আগের বছর ডাক না মারতে পারার আক্ষেপ তিনি এই বছরে ৭ টি ডাক মেরে মিটিয়ে ফেলেছেন।
- ২০০৩ সালে কোন ডাক মারেন নি। কেন মারেন নি? কারণ তিনি খেলেছিলেনই মাত্র ৩ টা ম্যাচ। প্রত্যেকতাতেই সিঙ্গেল ডিজিটে আউট হয়েছেন। ১,৬,৯ তাঁর স্কোর। কিন্তু দুধের সাধ কি আর ঘোলে মেটে?
- ২০০৪ সালে আফ্রিদী ২ টি ডাক মারেন। কিন্তু গত বছরের ডাক না মারতে পারার আক্ষেপ এবার তিনি অন্য পন্থায় মেটান। পর পর দুই ম্যাচে দুইটি ডাক মারেন। ক্যারিয়ারে প্রথম বারের মতো কোন বল না খেলেই এবার তিনি ডাক মারেন। শূণ্য বলে শূণ্য রান করে রান আউট হন তিনি।
- ২০০৫ সালে ৪ টি ডাক মারেন। ২ টি ছিল গোল্ডেন ডাক।
- ২০০৬ সালে ২ টি ডাক মারেন।
- ২০০৭ সালে ২ টি ডাক মারেন। ১ টি ছিল গোল্ডেন ডাক।
- ২০০৮ সালে একটি ডাক মারেন। সেটিও ছিল গোল্ডেন ডাক।
- ২০০৯ সালে ৩ টি ডাক মারেন। শেষ ২ টি ছিল গোল্ডেন ডাক।
- ২০১০ সালে ৩ টি ডাক মারেন। সবগুলোই ছিল গোল্ডেন ডাক।
- ২০১১ সালে কোন ডাক মারেন নি। এটা কি সম্ভব? নিশ্চয়ই পরের বছরের জন্য কোন সারপ্রাইজ হিসেবে রেখে দিয়েছেন।
- ২০১২ সালে ৫ টি ডাক মারেন। এর সবগুলোই মানে ৫ টি ডাক'ই ছিল গোল্ডেন ডাক। ক্রিকেট ইতিহাসে এক বছরে এতো গোল্ডেন ডাক মারার সাহস আর কোন ক্রিকেটারই দেখান নি। ভবিষ্যতে কেউ দেখাবেনও না।
- ২০১৩ সালে একটি ডাক মারেন।
- ২০১৪ সাল তো এখন চলছেই। সর্বশেষ টানা ৫ ম্যাচে সিঙ্গেল ডিজিটে আউট হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব তিনি মাঠে নেমে ডাক মারবেন।
আফ্রিদী সম্পর্কে কিছু অমৃত বাণীঃ
- আফ্রিদী ছোটবেলা থেকেই 0.facebook ব্যবহার করত।
- আসলেই ক্রিকেট উইল নেভার সি এনাদার ''ডাক্রিদি" কষ্ট লাগতাসে যে তখন ডাকবাবার বিনোদন দেখবো ক্যামনে!!!
- ফেসবুক বলতেসে আফ্রিদীকে নিয়ে ফেসবুকে একবার পোস্ট হয়ে গেলে তা আর ডিলেটের কোন সুযোগ নেই। লিজেন্ড আফ্রিদীর পোস্ট ফেসবুক তাদের আর্কাইভে সংরক্ষণ করে রাখতেসে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।
- আফ্রিদী নাম্বার ওয়ান হবে কেন? উনি নাম্বার জিরো হবেন। নাম্বার ওয়ানেরও উপরে। তাই তো প্রতিনিয়ত ডাক মেরে যাচ্ছেন। কয়েক দিন পর আফ্রিদীকে অলরাউন্ডার র্যাংকিং-এ 0(জিরো) নাম্বারে দেখলেও অবাক হবার কিছু নেই।
- আফ্রিদীকে নিয়ে কমেন্ট করতে আবার ল্যাপটপ, মোবাইল, কী-বোর্ড লাগে নাকি!!! আফ্রিদীকে নিয়ে মুখ দিয়ে কিছু বললে তা বিভিন্ন আফ্রিদীর পোস্টে কমেন্ট হিসেবে চলে যায়। ফেসবুক কতৃপক্ষ একমাত্র আফ্রিদীর অবদানের কথা চিন্তা করে এই সুবিধাটা দিয়েছে। কারণ ফেসবুকের জন্ম ১০ বছর আগে হলেও আফ্রিদী 0.facebook ব্যবহার করত ৩৫ বছর আগে থেকে।
- আফ্রিদীর আউট হবার ধরণ দেখে একজন হাঁসতে হাঁসতে মারা যাবার সময় এই মন্তব্যটি করেন- "আসলে আফ্রিদীকে নিয়ে ভাবতে গেলেই স্বর্গীয় অনুভুতি হয় আর স্বর্গীয় অনুভুতি হওয়া মানে আপনি ইহজগৎে আর নেই!"
- আফ্রিদিকে নিয়ে পূর্ণম ভাইয়ের লেখা গান- ভেঙ্গেছে স্ট্যাপ, লাগে বেদনা, উড়েছে বেলটা, ছক্কা হলোনা, ড্রেসিংরুম খুজে সে পাবে কি না, আফ্রিদি নিজেই জানে না!
- আপ্রিদি যখন ব্যাট করে তখন সব থেকে করুন অবস্থা হয় কার বলেন তো??? বল? না হয় নাই, বোলার? না এবারো হয় নাই? তাইলে কি????? স্ট্যাম্প। তারা চিন্তায় থাকে এই বুঝি গেলো গেলো
- জিষ্ণু ভাই বলেছিলেন- আপ্রিদি এমনই লেজেন্ড যে ওর টীমমেটরাও ওরে ডাক মারতে হেল্প করে।
- একজন তো বলেই ফেলেছেন- এভারগ্রিন ক্রিকেটার আফ্রিদি।
- মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেচে থাকলে ডাক মারে, আর আফ্রিদী কারণে অকারণে ডাক মারে, ক্ষণে ক্ষণে ডাক মারে!
- আপনি রেডিও আফ্রিদী শুনতে পারবেন এখন যেকোন সময়, যেকোন জায়গা থেকে। টিউন করুন ০০.০০ ফ্রিকুয়েন্সীতে।
একবার এক ভাই বলেছিলেন- " আফ্রিদীর ১০০০০ রান ও ৫০০ উইকেট আছে। "
কিন্তু তিনি এটা বলেন নি যে সে ৫০০ এর মত ম্যাচ খেলেছে। এতো ম্যাচ খেলতে পারলে যে কোন জাতীয় দলের প্লেয়ারই এটা করতে পারবে।
আমি শুধু বলেছিলাম- " আফ্রিদীর আরও কিছু রেকর্ড আছে। ওগুলো লিখতে বসলে কিন্তু সব তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে। ;) " এরপর আর তিনি তেমন কিছু বলতে সাহস পান নি।
ডাকবাবা আফ্রিদীর বোল্ড আউট হবার স্টাইলই বোধহয় সবচেয়ে হাস্যকর। আফ্রিদীর এতো এতো রেকর্ডের জন্যই হয়তো এখনো আমাদের দেশে আফ্রিদীর এত্তোগুলা পাংখা। উপরের রেকর্ড গুলো লেখার সময় আমি নিজেই আফ্রদীর ফ্যান হয়ে গেসি। কিভাবে পারে একজন এতো এতো রেকর্ডের মালিক হতে !!!!! এতো এতো ডাক মারতে !!!!! আফ্রিদী ব্যাটিং-এ নামলে আমি তাঁকিয়ে থাকি আফ্রিদীর আরো একটি ডাকের আশায়। আফ্রিদী ৩৮৪ টা ওয়ানডে খেলে রান নিয়েছে মাত্র ৭ হাজারের মত আর উইকেট নিয়েছে ৩৮৩ টা। অথচ সাকিব এই পরিমাণ ম্যাচ খেলতে পারলে তাঁর রান হতো ১২ হাজারের মত আর উইকেট থাকত ৫০০+। আমি বাংলাদেশেরই এমন অনেক পাকিস্তান ফ্যানকে দেখেছি যারা বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের ম্যাচেও পাকিস্তানকে সাপোর্ট করে। কারণ পাকিস্তান হারলে নাকি তাদের ইজ্জত থাকবে না। বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তান জিতলে বাংলাদেশি হয়েও তারা আনন্দ করে। তাদের কাছে নাকি আফ্রিদীর খেলা ভালো লাগে, তাই তারা পাকিস্তান সাপোর্ট করে। এটা আমাদের জন্য অনেক লজ্জার। সেই সব পাদারা শুধু একটা কথাই বলে- " কালার সাতা রাগ্নীতি মাশাবান না। "
লেখক ঃ ফাহিম রহমান
No comments:
Post a Comment